Wednesday, July 9, 2014

স্বপ্নের ফাইনালে আর্জেন্টিনা

ফুটবল বড়ই নিষ্ঠুর খেলা। আগের ম্যাচটিতেই যে হল্যান্ড টাইব্রেকার নামক ভাগ্য-পরীক্ষায় ‘বীরত্বে’র সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেমিফাইনালে, কাল সেখানেই টাইব্রেকার তাদের নিঃস্ব-রিক্ত করে দিল। ১২০ মিনিটের খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হওয়ার পর আর্জেন্টিনা কাল টা​ইব্রেকারে (৪-২) জিতে উঠে গেল ফাইনালে। ১৩ জুলাই মারাকানায় জার্মানির সঙ্গে হবে তাদের শিরোপা লড়াই। এ যেন ১৯৯০ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি। সেবার ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা টা​ইব্রেকারে জিতেই দাঁড়িয়েছিল রোমের ফাইনালে। কাল মেসির আর্জেন্টিনাও জিতল টাইব্রেকারে। এবার সোনালি ট্রফিটা কাদের হাতে উঠবে? ২৮ বছর পর শিরোপা উঠবে আর্জেন্টিনার হাতে, নাকি ২৪ বছর পর আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে জার্মানি?
প্রথমে নির্ধারিত ৯০ মিনিট, তারপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। সাও পাওলোর অ্যারেনা করিন্থিয়ানসে গোলের দেখা পেল না কোনো দলই। শুরু থেকেই এমন ট্যাকটিক্যাল লড়াই চলল যে, বোঝাই যাচ্ছিল, ম্যাচটি গড়াতে যাচ্ছে টা​ইব্রেকারে। বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী ছাড়তে রাজি ছিল না কেউই—না আর্জেন্টিনা, না হল্যান্ড। আগের সন্ধ্যার ৮ গোলের সেমিফাইনালের পর দ্বিতীয় সেমিফাইনালটি দাঁড়াল তাই পেনাল্টি শুট আউটের সামনে।
ইতিহাস বলে, ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে আর্জেন্টিনাই পায় ভাগ্যের ছোঁয়া। এর আগে বিশ্বকাপে চারবারের তিনবার জিতেছে তারা টাইব্রেকারে, হল্যান্ড দুইবারে একবার। এবারও দুর্ভাগা দলটির নাম হল্যান্ড। টাইব্রেকারে সব সময়ই সুযোগ থাকে গোলকিপারের নায়ক হয়ে ওঠার। কাল যেমন নায়কের আসনে বসলেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার সার্জিও রোমেরো। প্রথমেই হল্যান্ডের রন ভ্লারের কিকটি রুখে দেন তিনি। এরপর রুখে দেন ওয়েসলি স্নাইডারের কিক। আর্জেন্টিনার পক্ষে মেসি প্রথম কিক থেকে গোল করার পর একে একে গোল করেন এজেকিয়েল গ্যারাই, সার্জিও আগুয়েরো ও ম্যাক্সি রদ্রিগেজ। রদ্রিগেজের কিকটি ডাচ গোলকিপার ইয়াসপার সিলেসেনের হাতে লেগেও জালে আশ্রয় নিতেই বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে মেসির দল। গ্যালারিতেও তখন অজস্র আকাশি-সাদা পতাকার ওড়াউড়ি। এ যে বড় আনন্দের দিন আর্জেন্টাইনদের কাছে। ২৪ বছর পর তারা ফাইনালে!

লড়াইটা ছিল আক্রমণাত্মক দুটি দলের দুই আক্রমণত্রয়ীর। লড়াইটা ছিল ট্যাকটিকসের। এই দুটো লড়াইয়েই থাকল আশ্চর্য রকমের সমতা। গোলের সুযোগ তৈরি করা দূরে থাক, অ্যাটাকিং থার্ডে ঢুকতে পারেনি কোনো দলই। পাঁচজন ডিফেন্ডারে রক্ষণকে দুর্ভেদ্য করে রেখেছিলেন লুই ফন গাল। তবু কয়েকবার হানা দিয়েছেন লিওনেল মেসি। হলে কী হবে, মেসি ১৮ গজের কাছে এলেই হল্যান্ডের তিন ডিফেন্ডার এগিয়ে এসে তাঁকে ব্লক করেছেন। তুলনায় হল্যান্ডের প্রধান অস্ত্র আরিয়েন রোবেন ছিলেন যথেষ্টই শান্ত। তাঁকে প্রায় বোতলবন্দী করে রেখেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখে তাঁরই একসময়ের সতীর্থ মার্টিন ডেমিচেলিস।
 নব্বই মিনিটে অচলায়তন ভাঙতে পারেনি তাই কোনো দলই। তবে গোল করার মতো প্রথম সুযোগটা এসেছিল আর্জেন্টিনার কাছে। ১৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত একটা ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন মেসি। গড়ানো কিকটা ধরতে ভালোই একটা পরীক্ষা হয়ে যায় ডাচ গোলকিপার সিলেসেনের। এরপর গঞ্জালো হিগুয়েইনের বদলি হিসেবে নেমে সার্জিও আগুয়েরো প্রায় গোল করার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। ১:১ অবস্থায় শট নিতে যাবেন, এমন সময় কোত্থেকে উড়ে এসে স্লাইড করে বল বের করে দেন পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলা রন ভ্লার। তবে সহজতম সুযোগটি অবশ্যই হল্যান্ডের। নির্ধারিত সময়ের যোগ করা সময়ে আরিয়েন রোবেনকে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত করেছেন হাভিয়ের মাচেরানো। বার্সেলোনা ডিফেন্ডার শেষ মুহূর্তে স্লাইড করে আর্জেন্টিনার পতন ঠেকিয়েছেন কর্নারের বিনিময়ে।

No comments:

Post a Comment